বাউফল প্রতিনিধি ॥ বাউফল উপজেলায় ডায়রিয়া মহামারি আকারে ধারণ করেছে। গত তিন দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। করোনার ভয়ে অনেক ডায়রিয়ার রোগী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে না এসে বেসরকারি হাসপাতাল ও বাড়িতে বসেই গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে স্থান সংকুলন না হওয়ায় রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে কলেরা স্যালাইন সংকটের কারণে ৯২ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। দরিদ্র পরিবারের লোকজনদের বেশি দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এস.এম. সায়েম বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগীদের ওয়ার্ডে মাত্র ১০টি বেড রয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে ভর্তি রয়েছে ৮০ জন রোগী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। স্থানীয় এমপি আ.স.ম. ফিরোজের প্রচেষ্টায় ১০ হাজার প্যাকেট কলেরা স্যালাইন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত বুধবার পাওয়া গেছে। তবে বেশির ভাগ রোগী করোনার ভয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না এসে বাজার থেকে স্যালাইন কিনে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’ রোগীরা বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে ভালো না হয়ে মুমুর্ষু অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন বলেও তিনি জানান। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বত্রই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গ্রামগঞ্জের পল্লী চিকিৎসকরা ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। ডায়রিয়া চিকিৎসার প্রধান ওষুধ কলেরা স্যালাইন এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় ৯২ টাকার স্যালাইন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা ডায়রিয়ার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত তিন দিনে উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের মাসুম মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম (২৭), মমিনপুর গ্রামের বেল্লাল হাওলাদারের স্ত্রী মোসা. মাকসুদা বেগম(২৫), শাহিন হাওলাদারের পাঁচ বছরের মেয়ে কুলসুম আক্তার এবং বাউফল পৌর সভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আক্তার (৬০) ডায়রিয়ায় মারা গেছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, পরিবারের সদস্যরা প্রতিটি স্যালাইন ৫০০ টাকা করে কিনে এনে গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে তার শরীরে পুশ করেছেন। মমিনপুর এলাকার সমাজকর্মী মজিবুর রহমান জানান, স্থানীয়ভাবে স্যালাইন সংকটের কারণে অনেকেই পার্শ্ববর্তী বাখেরগঞ্জ, বরিশাল, দশমিনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে স্যালাইন কিনে এনে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, কোম্পানির স্যালাইনের সরবরাহ নাই। আমাদের ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্যালাইন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যার কারণে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘কেশবপুর ইউনিয়নের খাদিজা বেগমের চিকিৎসা শুরুর আগেই সে মারা গেছেন। এ ছাড়া অন্যত্র কেউ ডায়রিয়ায় মারা গেছেন কিনা সে খবর আমাদের জানা নেই।’ অতিরিক্ত তাপদহ, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘স্যালাইনের গায়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। স্যালাইন বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে গত বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ওষুধ ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
Leave a Reply